আজকে তোমাকে একটি নতুন ধরনের কাজ করতে হতে পারে। কাজটি খুব সহজ। তুমি কবে প্রথম যীশু'র নাম শুনেছিলে?” শিক্ষক তা তোমাকে বোর্ডে লিখতে বলবেন। তুমি তা মনে করতে চেষ্টা করো। লেখার আগে তুমি একটু চিন্তা করে নিয়ো। শিক্ষক তোমাকে আরও একটি প্রশ্নের উত্তর লিখতে বলতে পারেন। সেটি হলো, “তুমি এখন যীশু'র সম্পর্কে কী জানো তিনি তোমার কাছে কে?” তোমাকে এ প্রশ্নগুলোর উত্তর খুব গভীরভাবে ভাবতে হবে, পরে খাতায় উত্তর লিখতে হবে। এটা তোমার বাড়ির কাজ।
তুমি একটুও ভয় পেয়ো না কারণ তুমি যদি মনে করতে না পার তাহলে তুমি তোমার বাবা-মা/অভিভাবকের সাথে এ বিষয় নিয়ে কথা বলে পরবর্তী সেশনে বলতে পারো। যেহেতু তোমার সময় আছে তাই তুমি তোমার বাবা-মা/অভিভাবকের কাছ থেকে জেনে নাও। এতে তোমার উত্তর দিতে সহজ হবে। যদি বাবা-মা/অভিভাবক না বুঝতে পারে তবে নিচের লেখাটি তাদের দেখাও।
প্রিয় বাবা-মা/অভিভাবক,
আপনার সন্তান/পোষ্য “যীশু কে” এ বিষয়ে আপনার সাথে আলোচনা
করতে চায়। তাকে সময় দিন। এটা তার শিখন প্রক্রিয়ার অংশ।
তুমি যীশু'র অনেক মানবিক ও ঐশ্বরিক গুণাবলি বিষয়ে জেনেছো। তোমার এ জানার সাপেক্ষে শিক্ষক তোমাকে আজকে একটি নতুন কাজ করতে বলবেন। কাজটির জন্য শিক্ষক প্রথমে তোমাদের দলে দলে ভাগ করে দিবেন। এরপর নিচের টেবিলটি তোমাকে দেওয়া হবে যা ব্যবহার করে তোমরা দলগত আলোচনাটি করবে এবং সাথে সাথে নিজের খাতায় টেবিলটি লিখবে এবং পূরণ করবে।
যীশু-কে নিয়ে ভাবনা | অনুসরণীয় গুণ |
---|---|
যীশু-কে নিয়ে যে কথাগুলো ভেবেছো তা বাম দিকের কলামে একটি একটি করে লিখো। এরপর ডান দিকের কলামে ঐ পরিচয়ের প্রেক্ষিতে যে অনুসরণীয় গুণটি ভূমি চিহ্নিত করতে পারো তা লিখো। টেবিলটি এরকম হতে পারে:
যীশু-কে নিয়ে ভাবনা | অনুসরণীয় গুণ |
---|---|
প্রথম যীশুর নাম এবং তার মান জীবনের গল্প তোমার দাদু / ঠাকুরদাদার কাছে | দয়ালু যওয়া পরোপকারী রওয়া ক্ষমাশীল |
কাজটি শেষ হলে শিক্ষক পূরণকৃত টেবিলগুলো জমা নিবেন। সবগুলো টেবিল থেকে পাওয়া অনুসরণীয় গুণগুলো একত্রিত করে শিক্ষক বোর্ডে লিখবেন। যীশু'র গুণ এবং যীশু-কে নিয়ে আরো জানবে সামনের সেশনগুলোতে।
আজকে শিক্ষক বাইবেল বা শিশুতোষ বাইবেল থেকে মথি ১৬:১৩-২০ ও যোহন ১:১,১৪ পদ শ্রেণিকক্ষে তোমাদের পাঠ করে শোনাবেন। শিক্ষক যখন পাঠ করবেন তখন খুব ভালো করে শোনো। কোনো বিষয় অস্পষ্ট থাকলে শিক্ষকের কাছে জেনে নিয়ো।
যীশু ঈশ্বর পুত্র। তিনি মানুষ বেশে এ পৃথিবীতে এসেছেন। তাঁর মানবিক ও ঐশ্বরিক কাজ দেখে তাঁর সময়ের মানুষের মনে প্রশ্ন জেগেছে তিনি আসলে কে। যীশুর জীবন ও পবিত্র বাইবেল “যীশু কে” এ প্রশ্নের উত্তর জানতে আমাদের সাহায্য করে। চলো দেখি পবিত্র বাইবেলে এ বিষয়ে কী লেখা আছে।
পরে যীশু যখন কৈসরিয়া-ফিলিপি এলাকায় গেলেন তখন শিষ্যদের জিজ্ঞাসা করলেন, “মনুষ্যপুত্র কে, এই বিষয়ে লোকে কি বলে?” তাঁরা বললেন, “কেউ কেউ বলে আপনি বাপ্তিস্মদাতা যোহন, কেউ কেউ বলে এলিয়, আবার কেউ কেউ বলে ফিরমিয় বা নবীদের মধ্যে একজন।" তখন তিনি তাঁদের বললেন, কিন্তু তোমরা কি বল, আমি কে?” শিমোন-পিতর বললেন, “আপনি সেই মশীহ, জীবন্ত ঈশ্বরের পুত্র।" উত্তরে যীশু তাঁকে বললেন, “শিমোন বার-ঘোনা, তুমি ধন্য, কারণ কোন মানুষ তোমার কাছে এটা প্রকাশ করে নি; আমার স্বর্গস্থ পিতাই প্রকাশ করেছেন। আমি তোমাকে বলছি, তুমি পিতর, আর এই পাথরের উপরেই আমি আমার মণ্ডলী পড়ে তুলবো। নরকের কোন শক্তিই তার উপর জয়লাভ করতে পারবে না। আমি তোমাকে স্বর্ণ-রাজ্যের চাবিগুলো দেব, আর তুমি এই পৃথিবীতে যা বাঁধবে তা স্বর্গেও বেঁধে রাখা হবে এবং যা খুলবে তা স্বর্গেও খুলে দেওয়া হবে।" এর পরে তিনি তাঁর শিষ্যদের সাবধান করে দিলেন যেন তাঁরা কাউকে না বলেন যে, তিনিই মশীহ।
তোমাকে একটু সহজ করে বলি
লোকেরা যীশু সম্পর্কে কী বলেন, যীশু তা শিষ্যদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন। আর শিষ্যরা তা যীশুকে বলেছিলেন। কেউ যীশুকে এলিয়, ফিরমিয়, আবার কেউ বলে যীশু নবীদের মধ্যে একজন ইত্যাদি। তখন যীশু শিষ্যদের কাছে জানতে চাইলেন যে শিখারা যীশু সম্পর্কে কী ভাবে। তখন শিমোন-পিতর গভীর বিশ্বাস নিয়ে বললেন যে যীশু সেই জীবন্ত মশীহ, জীবন্ত ঈশ্বরের পুত্র। যীশু তাদের বললেন যে পিতরের বিশ্বাসের ওপর তিনি মণ্ডলী স্থাপন করবেন। সেই মণ্ডলী জগতের কোনো মন্দ শক্তি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তারপর যীশু তাদের সুখবর প্রচারের ও আরোগ্য করার শক্তি প্রদান করলেন। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে যীশু কে, যীশুর ক্ষমতা ও যীশু যে অন্যদের থেকে আলাদা তা আমরা বুঝতে পারি। আমরা এও বুঝতে পারি যে যীশু মানুষের বেশে ঈশ্বর-পুত্র হয়ে পৃথিবীতে এসেছেন।
প্রথমেই বাক্য ছিলেন, বাক্য ঈশ্বরের সঙ্গে ছিলেন এবং বাকা নিজেই ঈশ্বর ছিলেন।
সেই বাক্যই মানুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করলেন এবং আমাদের মধ্যে বাস করলেন। পিতা ঈশ্বরের একমাত্র পুত্র হিসাবে তাঁর যে মহিমা সেই মহিমা আমরা দেখেছি। তিনি দয়া ও সত্যে পূর্ণ।
তোমাকে একটু সহজ করে বলি
যীশু নিজেই বাক্য ছিলেন। এখানে বাক্য বলতে ঈশ্বরকে বোঝানো হয়েছে, একই সাথে ঈশ্বরের অসী ক্ষমতাকেও বোঝানো হয়েছে। সেই থাকা দ্বারা সবকিছু সৃষ্টি হয়েছিলো। যীশু নিজেই ঈশ্বর। তিনি ঈশ্বরের সঙ্গে স্বর্গে থাকতেন। তিনি মানব বেশে পৃথিবীতে আসলেন। যেন পাপী মানুষ পাপ থেকে মুক্ত হয়।
যীশু খ্রীষ্টের মানুষ হওয়ার মধ্য দিয়ে পৃথিবীর মানুষ ঈশ্বরের মহিমা দেখতে পেয়েছে। যীশু খ্রীষ্ট দয়া ও সত্যে পরিপূর্ণ। তিনি দয়াবান এবং সত্যময় ঈশ্বর। আমরাও যীশুর মতো দয়াবান ও সত্যবাদী হব।।
শিক্ষক আজ তোমাদের দুই/তিনজনকে হয়তো লুক ৩:১০-১৪ পদ ও ১৬:১-১৮ পদগুলো ধারাবাহিকভাবে পাঠ করতে বলবেন। তোমাকেও একটি অংশ পাঠ করতে হবে। পাঠ করার সময় শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করো। তোমার শ্রেণির অনারা কীভাবে উচ্চারণ করে তাও খেয়াল রাখো। শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে লুক ৩:১০-১৪, ১৬:১-১৮ পদের আলোকে সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ বিষয়ে আলোচনা করবেন। তুমি না বুঝলে শিক্ষককে জিজ্ঞেস করো, শিক্ষক তোমাকে বুঝিয়ে বলবেন।
পরিবারে ও সমাজে ভালো জীবন যাপন করতে হলে আমাদের কিছু সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ অর্জন করতে হবে। চলো যীশু এ বিষয়ে কী বলেছেন তা পাঠ করি।
তখন লোকেরা যোহনকে জিজ্ঞাসা করল, “তাহলে আমরা কি করব? যোহন তাদের বললেন, “যদি কারও দুটা জানা থাকে তবে যার জামা নেই সে তাকে একটা দিক। যার খাবার আছে সেও সেই রকম করুক।” কয়েকজন কর আদায়কারী বাপ্তিস্ম গ্রহণ করবার জন্য এসে যোহনকে বলল, "গুরু, আমরা কি করব? তিনি তাদের বললেন, “আইনে যা আছে তার বেশী আদায় কোরো না।” কয়েকজন সৈন্যও তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, “আর আমরা কি করব?" তিনি সেই সৈন্যদের বললেন, “জুলুম করে বা অন্যায়ভাবে দোষ দেখিয়ে কারও কাছ থেকে কিছু আদায় কোরো না এবং তোমাদের বেতনেই সন্তুষ্ট থেকো।"
তোমাকে একটু সহজ করে বলি
যীশু আমাদের মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে বলেছেন। গরিব, অসহায় ও অবহেলিত মানুষদের সাহায্য করা আমাদের দায়িত্ব। আমরা অন্যায়ভাবে কারও কাছ থেকে কিছু গ্রহণ করব না। মানুষের কাছ থেকে পাওনার অতিরিক্তও কিছু গ্রহণ করা অন্যায়। জোর করেও কিছু আদায় করব না। নিজের অর্জিত অর্থে আমরা সন্তুষ্ট থাকব। সমাজের সব ধরনের মানুষের সাথে ভালো আচরণ করার শিক্ষা যীশুর জীবন থেকে আমরা নিতে পারি।
যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “কোন এক ধনী লোকের প্রধান কর্মচারীকে এই বলে দোষ দেওয়া হল যে, সে তার মনিবের ধন-সম্পত্তি নষ্ট করছে। তখন ধনী লোকটি তাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, 'তোমার সম্বন্ধে আমি এ কি শুনছি? তোমার কাজের হিসাব দাও, কারণ তুমি আর প্রধান কর্মচারী থাকতে পারবে না"। "
“তখন সেই কর্মচারী মনে মনে বলল, “আমি এখন কি করি? আমার মনিব তো আমাকে চাকরি থেকে ছাড়িয়ে দিচ্ছেন। মাটি কাটবার শক্তি আমার নেই, আবার ভিক্ষা করতেও লজ্জা লাগে। যা হোক, চাকরি থেকে বরখাস্ত হলে পর লোকে যাতে আমাকে তাদের বাড়ীতে থাকতে দেয় সেইজন্য আমি কি করব তা আমি জানি।"
“এই বলে যারা তার মনিবের কাছে ধার করেছিলো তাদের প্রত্যেককে সে ডাকল। তারপর সে প্রথম জনকে জিজ্ঞাসা করল, 'আমার মনিবের কাছে তোমার ধার কত?' সে বলল, 'দু' হাজার চারশো লিটার তেল।' সেই কর্মচারী তাকে বলল, * যে কাগজে তোমার ধারের কথা লেখা আছে সেটা নাও এবং শীঘ্র বসে এক হাজার দু'শো লেখ।' সেই কর্মচারী তারপর আর একজনকে বলল, 'তোমার ধার কত?" সে বলল, 'আঠার টন গম।' কর্মচারীটি বলল, 'তোমার কাগজে সাড়ে চৌদ্দ টন লেখ।' সেই কর্মচারী অসৎ হলেও বুদ্ধি করে কাজ করল বলে মনিব তার প্রশংসা করলেন।
এতে বোঝা যায় যে, এই জগতের লোকেরা নিজেদের মত লোকদের সঙ্গে আচার- ব্যবহারে আলোর রাজ্যের লোকদের চেয়ে বেশী বুদ্ধিমান। আমি তোমাদের বলছি, এই মন্দ জগতের ধন দ্বারা লোকদের সঙ্গে বন্ধুত্ব কর, যেন সেই ধন ফুরিয়ে গেলে পর চিরকালের থাকবার জায়গায় তোমাদের গ্রহণ করা হয়। সামান্য ব্যাপারে যে বিশ্বাসযোগ্য সে বড় ব্যাপারেও বিশ্বাসযোগ্য হয়। সামান্য ব্যাপারে যাকে বিশ্বাস করা যায় না তাকে বহু ব্যাপারেও বিশ্বাস করা যায় না। এই জগতের ধন-সম্পত্তির ব্যাপারে যদি তোমাদের বিশ্বাস করা না যায় তবে কে তোমাদের বিশ্বাস করে আসল ধন দেবে? অন্যের অধিকারে যা আছে তা ব্যবহার করবার ব্যাপারে যদি তোমাদের বিশ্বাস করা না যায়, তবে তোমাদের নিজেদের অধিকারের জন্য কেউ কি তোমাদের কিছু দেবে?
“কোন দাস দু'জন কর্তার সেবা করতে পারে না, কারণ সে একজনকে ঘৃণা করবে
ও অন্যজনকে ভালবাসবে, কিম্বা সে একজনের প্রতি মনোযোগ দেবে ও অন্যজনকে তুচ্ছ করবে। ঈশ্বর ও ধন-সম্পত্তি এই দু'য়েরই সেবা তোমরা একসঙ্গে করতে পার না।”
এই সব কথা শুনে ফরীশীরা যীশুকে ঠাট্টা করতে লাগলেন, কারণ তারা টাকা-পয়সা বেশী ভালবাসতেন। তখন যীশু তাঁদের বললেন, "আপনারা লোকদের সামনে নিজেদের ধার্মিক
দেখিয়ে থাকেন কিন্তু ঈশ্বর আপনাদের মনের অবস্থা জানেন। মানুষ যা সম্মানিত মনে করে ঈশ্বরের চোখে তা ঘৃণার যোগ্য।
* বাপ্তিস্মদাতা যোহনের সময় পর্যন্ত মোশির আইন-কানুন এবং নবীদের লেখা চলত। তারপর থেকে ঈশ্বরের রাজ্যের সুখবর প্রচার করা হচ্ছে এবং সবাই আগ্রহী হয়ে। জোরের সঙ্গে সেই রাজ্যে ঢুকছে। তবে আইন-কানুনের একটা বিন্দু বাদ। পড়বার চেয়ে বরং আকাশ ও পৃথিবী শেষ হওয়া সহজ।"
তোমাকে একটু সহজ করে বলি
জীবনে সততা ও ন্যায্যতা ধারণ করে আমাদের জীবন যাপন করতে হবে। মিথ্যা কথা বলা থেকে বিরত থাকব এবং অন্যের সম্পত্তির প্রতি লোভ করব না। অন্য মানুষের কোনো কিছুতেই লোভ করব না। মিথ্যা বলে অতিরিক্ত গ্রহণ করা থেকে নিজেকে সংযত রাখব। মানুষের সাথে প্রতারণা করব না। ধনের মোহ থেকে দূরে থাকব। সব ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত থাকতে হবে, ছোট বিষয়ে হোক কি বহু বিষয়ে হোক। একই সময় ধন ও ঈশ্বরকে ভালোবাসা যায় না। ধন-সম্পদ বুদ্ধির সাথে ব্যবহার করে মানুষের উপকার করব। ঈশ্বরকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসব। প্রিয় মানুষকে পরিত্যাগ করা যাবে না। ঈশ্বরের রাজ্যে সুখে বসবাস করার জন্য পৃথিবীর মানুষের সাথে মিলেমিশে থাকব।
সাক্ষাৎকারের বাড়ির কাজ
তোমাকে একটি সাক্ষাৎকার নিতে হবে। কীভাবে সাক্ষাৎকার নিতে হয় শিক্ষক তা তোমাকে বুঝিয়ে বলবেন। শিক্ষক তোমাকে জিজ্ঞেস করবেন যে তুমি কখনও টেলিভিশন বা কোথাও কারও সাক্ষাৎকার দেখেছো কি-না। তিনি তোমাকে তোমার কোনো একজন প্রতিবেশীর সাক্ষাৎকার নিতে বলবেন। ঐ প্রতিবেশীকে যে প্রশ্নটি করতে হবে তা হলো, “আপনি আমাকে এমন একটি কাজ বলুন যে কাজটি করতে যীশু আপনাকে অনুপ্রাণিত করেছেন।" তুমি যখন সাক্ষাৎকার নিবে তখন তার কথাগুলো খুব ভালো করে শুনো। সাথে সাথে খাতায় লিখে রেখো। তুমি যদি খাতায় না লিখো তাহলে পরে ভুলে যেতে পারো। তুমি তাকে প্রশ্ন করতে পার, নিজের কথা বলতে পারো, তবে তার কথাগুলো বেশি করে শুনো। তুমি যদি একাধিক প্রতিবেশীর সাক্ষাৎকার নিতে চাও, নিতে পারো।
তোমাকে কিন্তু ঐ উত্তরগুলো পরবর্তী সেশনে শিক্ষকের কাছে জমা দিতে হবে।
তোমাদের জমাকৃত সাক্ষাৎকার থেকে প্রাপ্ত উত্তরগুলো শ্রেণিকক্ষে প্রত্যেকে উপস্থাপন করবে। সাক্ষাৎকার থেকে প্রাপ্ত উত্তরগুলোর প্রেক্ষিতে কোনো বিশেষ ভাবনা তোমার আছে কি না শিক্ষক তা তোমাকে জিজ্ঞেস করবেন। যেমন হতে পারে তোমার প্রতিবেশী সম্বন্ধে কোনো বিশেষ উপলব্ধি সবার সাথে share করতে পারো। তুমি যদি তোমার প্রতিবেশীর কোন বিশেষ উপলব্ধি share করো তাহলে খুব মজা হবে কারণ তুমি তোমার অভিজ্ঞতার কথা বলতে পারবে।
তোমার ও অন্যদের প্রদত্ত সাক্ষাৎকার থেকে প্রাপ্ত কাজগুলোর একটি তালিকা শিক্ষক প্রস্তুত করবেন। শিক্ষার্থী সংখ্যা সাপেক্ষে এক বা একাধিক সেশনে ক্রমানুসারে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর সাক্ষাৎকার থেকে প্রাপ্ত কাজগুলো এ তালিকায় উঠে আসবে। এবার একজন করে শিক্ষার্থীকে সামনে এসে এই তালিকা থেকে একটি করে কাজ বেছে নিতে বলবেন। তোমাকেও একটি কাজ বেছে নিতে হবে যা পরবর্তী সেশনের আগে তোমাকে সম্পাদন করতে হবে। যেমন সাক্ষাৎকার থেকে হয়তো উঠে আসতে পারে যে কোনো প্রতিবেশী দান করে কারণ যীশু তাকে দান করতে অনুপ্রাণিত করেছেন। তাহলে বোর্ডে লিখা হবে, “দান করা”। এভাবে বোর্ডে লেখা হতে পারে, "দান করা", "ক্ষমা করা”, “অন্যকে সাহায্য করা", প্রভৃতি। অতঃপর তোমাদের প্রত্যেককে এই কাজগুলো থেকে একটি করে কাজ বেছে নিতে হবে। তোমাদের করা কাজটির একটি সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা বক্তৃতার মাধ্যমে পরবর্তী সেশনে উপস্থাপন করতে হবে।
কাজটি করা
যে কাজটি তুমি পছন্দ করেছিলে সেটা যত্ন নিয়ে করো। চেষ্টা করো পুরো কাজটা নিজে করতে, একদম না পারলে কারও সাহায্য নাও। তুমি আবিষ্কার করবে ভালো কাজ করা দারুণ আনন্দের!
উপস্থাপন
শিক্ষক তোমাকে তোমার করা কাজটির উপর একটি সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দিতে বলবেন। গুছিয়ে সুন্দরভাবে তোমার অভিজ্ঞতাটি শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন করো। উপস্থাপন শেষে প্রশ্নোত্তর পর্ব হলে তাতেও অংশগ্রহণ কোরো।
একে অপরের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করো। অতঃপর, একটি প্রার্থনার প্রস্তুতি নাও। শিক্ষক তোমাদের হয়তো দলে ভাগ করে দিবেন এবং সামসঙ্গীত/গীতসংহিতা ১৩৬:১-৯ পদ প্রার্থনার অংশ হিসেবে ভক্তিসহকারে পড়তে বলবেন।
ভগবানের স্তবগান কর; কত না মঙ্গলময় তিনি।
তাঁর দয়া, সে তো চিরকালেরই দয়া।
দেবতার দেবতা যিনি, তাঁর স্তব কর;
তাঁর দয়া সে তো চিরকালেরই দয়া।
তাঁর দয়া সে তো চিরকালেই দয়া।
একাই কত মহা অপরুপ কাজ করেছেন তিনি;
তাঁর দয়া, সে তো চিরকালেরই দয়া।
নভোমন্ডল গড়েছেন তিনি আপন প্রজ্ঞাবলে;
তাঁর দয়া সে তো চিরকালেরই দয়া।
জলরাশির বুকে তিনি প্রসারিত করেছেন এই স্থলভূমি:
তিনিই সৃষ্টি করেছেন মহাজ্যোতি সকল
সূর্যকে তিনি করেছেন দিনের অধীশ তাঁর দয়া,
সে তো চিরকালেরই দয়া।
চন্দ্র ও ভারা-নক্ষত্রকে করেছেন রাত্রর অধীশ
তাঁর দয়া, সে তো চিরকালেরই দয়া।
তাঁর দয়া, সে তো চিরকালেরই দয়া।
পদ পাঠ শেষে শিক্ষক বোর্ডে নিচের লাইনটি লিখে দিবেন। “সেই নদীর দু'ধারেই জীবন-গাছ ছিলো। তাতে বারো রকমের ফল ধরে।”
শিক্ষক তোমাকে উপরের লাইনের আলোকে তোমার ইচ্ছামতো একটি ছবি আঁকতে বলবেন। তুমি ভেবে দেখোতো তোমার গ্রামের বাড়িতে কী কী গাছ আছে অথবা তোমার স্কুলের পথে চারপাশে কী কী গাছ তুমি
দেখতে পাও। তা নিয়েই একটি ছবি এঁকে ফেলো (নিচের বক্সটা ব্যবহার করতে পারো কিংবা আলাদা কাগজে; আলাদে কাগজ হলে ছবির নিচে নিজের নাম লিখতে ভুলো না)।
তুমি এই যে ফুল-ফল, বিভিন্ন গাছের ছবি কতো সুন্দর করে আঁকছো, ভেবে দেখো তো স্রষ্টা সত্যিকারের ফুল-ফল-গাছ- পৃথিবী সমস্ত কিছু কী সুন্দর করেই না সৃষ্টি করেছেন! আঁকা শেষে স্রষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ো।
|
তা দেখে বাড়ীর দাসেরা এসে মনিবকে বলল, "আপনি কি জমিতে ভাল বীজ: বোনেন নি? তবে শ্যামাদাস কোথা থেকে আসল?' “তিনি তাদের বললেন, 'কোন শত্রু এটা করেছে।” “দাসেরা তাঁকে বলল, “তবে আমরা গিয়ে সেগুলো তুলে ফেলব কি?? “তিনি বললেন, “না, শ্যামাঘাস তুলতে গিয়ে তোমরা হয়তো ঘাসের সঙ্গে গমও তুলে ফেলবে। ফসল কাটবার সময় পর্যন্ত ওগুলো একসংগে বাছতে দাও। যারা ফসল কাটে, আমি তখন তাদের বলব যেন তারা প্রথমে শ্যামাঘাসগুলো জড়ো করে পোড়াবার জন্য আঁটি আঁটি করে বাঁধে, আর তার পরে গম আমার গোলায় জমা করে।
তারপর সে কিছু বীজ উর্বর মাটিতে লাগিয়ে দিল। প্রচুর জলের ধারে উইলো গাছের মত করে সে তা লাগিয়ে দিল। সেটা হল। সেটা গজিয়ে উঠে মাটিতে ছড়িয়ে পড়া একটা লতা হল। সেই লতার ডগাগুলো ঐ ঈগলের দিকে ফিরল, আর তার শিকড়গুলো রইল মাটির গভীরে। এইভাবে সেই লতা বড় হল এবং তাতে পাতা সুদ্ধ অনেক ভগা বের হল । কিন্তু সেখানে পালখে ঢাকা ডানাযুক্ত আর একটা বড় ঈগল ছিলো। সেই লতা জল পাবার জন্য তার শিকক্ষ ও ডগাগুলো সেখান থেকে সেই ঈগলের দিকে বাড়িয়ে দিল। প্রচুর জলের পাশে ভাল মাটিতে তাকে লাগানো হয়েছিলো যাতে সে অনেক ভগা বের করতে পারে, ফল ধরাতে পারে ও সুন্দর লতা হয়ে উঠতে পারে।
তোমাকে একটু সহজ করে বলি
ঈশ্বর জগৎ ও জীবনের সৃষ্টিকর্তা। তিনি সুন্দর ও পবিত্র। তিনি শূন্য থেকে সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন। তাঁর সকল সৃষ্টির মাঝে রয়েছে একটি পারস্পরিক যোগাযোগ ও নির্ভরশীলতা। তিনি সবকিছু নিপুনভাবে সাজিয়ে রেখেছেন। ঈশ্বর অতি ক্ষুদ্র বীজ থেকে বৃহৎ বৃক্ষের রূপান্তর ঘটাতে পারেন, শুয়োপোকা থেকে প্রজাপতি
বানাতে পারেন, একপা-দুইপা হাঁটা শিশু থেকে পূর্ণাঙ্গ মানুষ বানাতে পারেন। অগণিত সৃষ্টির বৈচিত্র্যপূর্ণ সৌন্দর্যের মধ্য দিয়ে স্রষ্টা নিজেকে প্রকাশ করেছেন। ঈশ্বরের সব সৃষ্টিই উত্তম। আপাত দৃষ্টিতে কোনো কোনো সৃষ্টির ভূমিকা মন্দ প্রতীয়মান হলেও তারা প্রকৃতিতে কোনো না কোনো ভূমিকা রাখছে এবং সেই ভূমিকা ঈশ্বরই নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
ঈশ্বরের সৃষ্টিসমূহ তাঁর দেখানো পথে না চলে ভুল পথে চললে ঈশ্বর মনঃক্ষুণ্ণ হন। পবিত্র বাইবেল এ ভালো বীজ বলতে বোঝানো হয়েছে যে, যারা ঈশ্বরের দেখানো পথে জীবনযাপন করে। আর শ্যামাঘাস / মন্দ বীজ বলতে বোঝানো হয়েছে যে, যারা ঈশ্বরের ইচ্ছানুযায়ী জীবন যাপন করে না। স্রষ্টা তার সৃষ্টির মাধ্যমেই যেমন ভালো মানুষের সাহচর্যে ভুল পথে চলা মানুষকে সঠিক পথে ফিরে আসার সুযোগ দেন। ঈশ্বরের প্রত্যাশা মানুষের ভালো কাজ যেনো আরও বৃদ্ধি পায়। এটা হয় যখন আমরা স্রষ্টার সৃষ্টিগুলোর যত্ন নেই, সকল সৃষ্টির সাথে আমাদের সংযোগ অনুভব করতে পারি, এবং স্রষ্টার প্রতি ভালোবাসায় সিক্ত হই।
বাড়ির কাজ
তোমার শিক্ষক বাড়িতে করার জন্য তোমাকে একটি মজার কাজ দিবেন। কাজটি হতে পারে এরকম: তোমার নিজের বা প্রতিবেশীর কোনো pet-এর যত্ন নিবে। কাজটি কীভাবে করতে পারো তা তোমাকে একটু বুঝিয়ে দিচ্ছি, তুমি মন দিয়ে শোনো। হতে পারে তুমি pet টিকে গোসল করালে বা খাওয়ালে বা পশুচিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে। তবে তুমি চাইলে তোমার পছন্দমতো অন্য কোনো যন্ত্রের কাজও করতে পারো। তবে এ কাজগুলো করার সময় তোমাকে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যেমন অসুস্থ পশুর কাছে না যাওয়া, আঁচড় থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা, এবং এমন পশুর যত্ন নেওয়া যার টিকাসমূহ হালনাগাদ আছে। পরবর্তী সেশনে তোমার অভিজ্ঞতা উপস্থাপন করতে হবে। Pet-এর বিষয়ে তোমার বাবা-মা/অভিভাবকের সাহায্য লাগতে পারে। তাই তোমার বাবা-মা/অভিভাবককে নিচের লেখাটি দেখাও।
প্রিয় বাবা-মা/অভিভাবক,
আপনার সন্তান/পোষাকে pet-এর উপর একটি বাড়ির কাজ দেওয়া হয়েছে। তাকে এ বিষয়ে সাহায্য করুন। যদি আপনার সন্তান/পোষ্যের কোনো অ্যালার্জি থাকে, বা অন্য কোনো সমস্যা থাকে তবে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
যদি তোমার শ্রেণিকক্ষে projector-এর ব্যবস্থা থাকে তবে উপস্থাপনের দিন তুমি pen drive-এ ছবি নিয়ে আসতে পারো। চাইলে pen drive-এর বদলে শিক্ষককে তুমি ইমেলও করতে পারো। সেক্ষেত্রে তোমার শিক্ষকের ইমেল ঠিকানা জেনে নাও। Projector-এর সুবিধা না থাকলে যে পশুটির তোমরা যত্ন নিয়েছো তার একটি ছবি নিজে হাতে এঁকে ফেলো, ছবিটির নিচে তোমার পোষা প্রাণিটির নাম লিখো এবং ছবিটি শ্রেণিকক্ষে নিয়ে যাও।
তুমি তোমার pet-এর প্রতি বা প্রতিবেশীর pet-এর প্রতি যেভাবে যত্ন নিয়েছো তা শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন করবে। যে pet-এর যত্ন নিয়েছো তার একটি ছবি তুলে তোমার শিক্ষকের কাছে জমা দিতে পারো। নতুবা নিচের বক্সে কিংবা আলাদা একটি কাগজে যত্ন করে এঁকে ফেলো। শিক্ষক তোমার পোষা প্রাণীর ছবি বোর্ডে লাগিয়ে নিতে পারেন বা সবাইকে দেখাতে পারেন।
অন্যরা যখন উপস্থাপন করবে তখন কিন্তু তুমি ভালো করে শুনবে। তোমার সহপাঠীদের কোনো যত্ন করার পদ্ধতি বা কাজ যদি ভালো লাগে তবে তোমার pet-এর প্রতিও সেভাবে যত্ন নিতে পারো।
|
শিক্ষক তোমাকে তোমার সহপাঠিদের সাথে রক্তদান সেবাকেন্দ্র/স্বাস্থসেবাকেন্দ্র / হাসপাতালে নিয়ে যাবেন। যাওয়ার আগে বাবা-মায়ের অভিভাবকের অনুমতি প্রয়োজন তাই তুমি বাবা-মা/অভিভাবকের স্বাক্ষরিত অনুমতিপত্র যথাসময়ে শিক্ষকের হাতে জমা দাও।
শিক্ষকের কাছ থেকে এ field trip-এ যাওয়ার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভালোভাবে বুঝে নাও। শিক্ষকের নির্দেশ অনুযায়ী সঠিক সময়ে যাত্রার জন্য নির্দিষ্ট স্থানে উপস্থিত থাকবে। প্রয়োজনীয় পানি, কলম ও নোটবুক, যদি শীতকালে যাও শীতের জামা, ইত্যাদি নিয়ে রওনা হবে। যানবাহনে শান্ত থাকবে। যদি হেঁটে যেতে হয় তবে সাবধানে পথ চলতে ভুলো না।
যাত্রার আগে সবাই মিলে নিরাপদ যাত্রার জন্য প্রার্থনা করতে পারো।
রক্তদান কেন্দ্র বা হাসপাতালে অসুস্থ ও বিপদগ্রস্থ মানুষ আসে। তাই এখানে সংগত কারণেই তোমরা সাবধানে সুশৃঙ্খলভাবে নড়াচড়া করবে। সব কিছু মনোযোগ দিয়ে দেখো। ঐ দেখো, গেটের পাশে সেবা গ্রহণকারীদের তথ্য ও নাম নিবন্ধন করা হচ্ছে। লক্ষ কর যে যারা এসেছে প্রত্যেকেই চাহিদা মতো সেবা পাচ্ছে। কাউকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে না। তুমি কি অনুভব করতে পারছো যে, সেবাদানকারীগণ কতো আন্তরিক? দেখতে পাচ্ছো কি যে, খুব অসুস্থ রোগীদের অন্য কোনো বড় হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে?
যদি তোমার মনে কিছু দাগ কেটে থাকে তবে নোটবুকে লিখে রাখো। কোনো কিছু দেখে তোমার কি মনে হয়েছে সেবাদানে পার্থক্য করা হচ্ছে? কাউকে ভালো সেবা দেওয়া হচ্ছে, বা কাউকে দেওয়া হচ্ছে না?
তোমার শিক্ষক বাড়ি ফেরার জন্য প্রস্তুতি নিতে বললে তোমার আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র গুছিয়ে নাও। তোমার বন্ধুকেও গুছিয়ে নিতে সাহায্য করো।
তুমি এবং তোমার বন্ধুরা যে শত দেশনে field trip-এ গিয়েছিলে তা কেমন লেগেছিলো? শিক্ষক তোমাকে তা জিজ্ঞেস করতে পারেন। তোমার অনুভূতিগুলো গুছিয়ে ব্যক্ত করো।
শিক্ষক একটি পোস্টার কাগজে নিচের প্রশ্ন দুইটি লিখে দিতে পারেন। এবং তোমাদের দলে ভাগ করে নির্দিষ্ট সময় ধরে প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করতে বলতে পারেন।
প্রশ্নগুলো হলো:
আলোচনা করার সময় নিজের ভাবনা এবং কথাগুলো বলার পাশাপাশি দলের অন্যান্য শিক্ষার্থীর ভাবনা এবং কথাগুলোও মনোযোগ দিয়ে শুনবে। শিক্ষক নির্দিষ্ট সময় শেষে তোমাদের কাউকে সামনে দাঁড়িয়ে আলোচনার সারমর্ম বলতে বললে দাঁড়িয়ে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করবে। আর তোমার বন্ধু যদি উপস্থাপন করে তবে মনোযোগ দিয়ে তা শুনবে। শিক্ষক আলোচনা শেষে তোমাকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক একটি পোস্টার দেখাবেন। পোস্টারটা পাশের পৃষ্ঠায়ও দেখতে পাবে। পোস্টারটি তুমি মনোযোগ দিয়ে দেখো। কথাগুলো লক্ষ করো:
বাংলার হিন্দু, বাংলার খ্রিষ্টান
বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার মুসলমান
আমরা সবাই বাঙালি
১৯৭১ সালে এই পোস্টারটি এঁকেছিলেন দেবদাস চক্রবর্তী। জানো কি মুক্তিযুদ্ধের সংকটময় মুহুর্তে এ কথাগুলো মানুষের মনে অনেক অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে?
বাড়ির কাজ
প্রিয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক তোমাকে একটি বাড়ির কাজ দিবেন যেখানে তুমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার নিবে। তোমার চারপাশে তাই একজন মুক্তিযোদ্ধাকে খুঁজে বের করবে। হতে পারে তিনি তোমার আত্মীয় বা প্রতিবেশী। হতে পারে তিনি অন্য কেউ। মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের এই দেশটা যুদ্ধ করে এনে দিয়েছেন। তাই অনেক ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা নিয়ে তাদের সাথে কথা বলবে।
কথোপকথনে নিচের প্রশ্নগুলো করতে পারো।
সাক্ষাৎকারটি তুমি লিখিত আকারে পরবর্তী সেশনে শিক্ষকের কাছে জমা দিবে।
তোমার দেখা মুক্তিযোদ্ধা
তুমি জানো অনেক ত্যাগ ও ভিভিক্ষার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের এই বাংলাদেশ দিয়েছেন। সাক্ষাৎকার শেষে ঘরে ফিরে যে মহান মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার তুমি নিয়েছো তার একটা ছবি নিচের বক্সে এঁকে ফেলো (এই ধরনের ছবিকে portrait বলে)।
|
তোমার নেওয়া মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকারটি লিখিত আকারে শিক্ষকের কাছে জমা দাও। শিক্ষক তোমাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন মুক্তিযোদ্ধার সাথে কথা বলার সময় তোমার অনুভূতি কেমন হয়েছিলো?
এবার শিক্ষক তোমাদের প্রত্যেককে একটি করে পোস্টার কাগজ দিবেন যাতে নিজের মনের মতো করে একটি পোস্টার তুমি আঁকবে। তিনটি বিষয়ের আলোকে তুমি পোস্টারটি আঁকবে: তোমাকে শিক্ষক মুক্তিযুদ্ধের যে পোস্টারটি দেখিয়েছিলেন, আগের সেশনে দলগত আলোচনা যা করেছিলে এবং মুক্তিযোদ্ধার সাথে তোমার যা কথোপকথন হয়েছিলো।
এই কাজ শেষে শিক্ষক তোমার সাথে সরাসরি কথা বলতে পারেন। তিনি জিজ্ঞেস করতে পারেন তুমি কোন্ ভাবনা থেকে তোমার পোস্টারটি বানিয়েছো? কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছো? তোমার নেওয়া সাক্ষাৎকারের সাথে এ পোস্টারের কী সংযোগ আছে? এ প্রশ্নগুলোর উত্তর কিন্তু তোমার জানা। একটু গুছিয়ে শিক্ষককে জানাও।
মানুষদের তুচ্ছ করতো, তাদের তারা অধার্মিক মনে করতো। বিশেষ করে শমরীয় জাতির লোকদের তারা তুচ্ছ বা ঘৃনা করতো। যিহুদীরা তাদের সঙ্গে ওঠা-বসা, খাওয়া-দাওয়া, চলা-ফেরা করত না; এমনকি তারা শমরীয়দের বাসভূমি দিয়ে চলাচল পর্যন্ত করতো না। কিন্তু যীশু ছিলেন এসবের উপরে। বাইবেলে যোহন লিখিত সুসমাচার ৪ অধ্যায় থেকে আমরা জানতে পারি যে, যীশু একবার সেই অঞ্চলে গেলেন। এমন কি তিনি সেখানে গিয়ে একজন শমরীয় নারীর কাছে পিপাসা মিটানোর জন্য জল চাইলেন। সমাজের ধর্মীয় ও সামাজিক সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে যীশু সেদিন পিপাসা মেটানোর জন্য জল চাইতে দ্বিধা করেননি।
সুসমাচার লুক ১০ অধ্যায়ে দেখতে পাই সামাজিক বা ধর্মীয় যে কোন বাধার ঊর্ধ্বে উঠে মানুষ অন্য মানুষের প্রতি প্রেম বা সহমর্মিতা প্রকাশ করতে পারে। এটা অন্য মানুষের প্রতি প্রেম বা সহমর্মিতা প্রকাশের একটি চমৎকার উপমা (প্রতিবেশী বিষয়ক সেশনগুলোতেও এই গল্পটি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে)। দৃষ্টান্তটি সংক্ষেপে এরূপ যেরূশালেম থেকে যিরীহো শহরে যাবার সময়ে একজন যিহুদীকে একদল দস্যু অনেক প্রহার করে আধমরা অবস্থায় পথের পাশে ফেলে চলে যায়। পরে ঐপথ দিয়ে একজন যাজক এবং তারপরে একজন লেবীয় (যাজকীয় কাজে সাহায্যকারী লোক) নিজ নিজ কাজে চলে গেল। তারা কেউই সেই বিপদগ্রস্থ লোকটির সাহায্যে এগিয়ে আসে নি। পরে ঐ পথ দিয়ে একজন শমরীয় ব্যক্তি (যে ছিলো অয়িহদী ও যিহুদীদের দৃষ্টিতে বিধর্মী) যাচ্ছিলেন। তিনি পথের পাশে পড়ে থাকা ঐ মৃতপ্রায় ব্যক্তিকে দেখে তাকে সমস্ত প্রকারের সাহায্য করলেন, তার চিকিৎসার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে তার পক্ষে যা যা করা সম্ভব তা করলেন। তিনি তাকে একটা পান্থশালায় নিয়ে গেলেন এবং সেখানে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিলেন। শুধু তাই নয়, তার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বহনের প্রতিশ্রুতি দিলেন।
ঈশ্বরের আজ্ঞার মধ্যে সবচেয়ে মহৎ আজ্ঞা কী? [ এমন এক প্রশ্নের উত্তরে যীশু বলেছেন, “সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে দরকারি আদেশ হলো, 'তোমরা প্রত্যেকে তোমাদের সমস্ত অন্তর, সমস্ত প্রাণ এ সমস্ত মন দিয়ে তোমাদের প্রভু ঈশ্বরকে ভালবাসবে।' তার পরের দরকারি আদেশটা প্রথমটারই মতো: 'তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মতো ভালবাসবে। খ্রীষ্টধর্মের সমস্ত শিক্ষা এই দুইটি আদেশের উপরেই নির্ভর করে আছে।” (মথি ২২:৩৭-৪০, মার্ক ১২:২৯-৩১, লুক ১০:২৭)। সাধু লুকের সুসমাচারে যীশুর বলা গল্পটিতে সেই শমরীয় ব্যক্তিই হয়েছিলেন আহত লোকটির কাছে প্রকৃত প্রতিবেশী।
খ্রীষ্ট ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের চেয়ে মানুষের জীবনকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন ধর্ম মানুষের জন্য, মানুষ ধর্মের জন্য নয়। যীশু খ্রীষ্ট আমাদের শিক্ষা নেন যেন জাতি, গোত্র, ধর্ম, সম্পদ, সামাজিক পদমর্যাদা, ইত্যাদির কথা বিবেচনা না করে সকল মানুষকে সম্মান করি, সকলের মধ্যেই যে ঈশ্বরপ্রদত্ত অনেক গুণ আছে বা থাকতে পারে সে কথা যেন মনে রাখি। প্রত্যেকের ন্যায্য ও মানবীয় অধিকারকে সম্মান করা আমাদের এক পবিত্র দায়িত্ব। শত রকমের বৈচিত্রের মাঝে ঐক্য ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের কোন বিকল্প আজ পৃথিবীতে নেই।
পবিত্র বাইবেল এ যীশু খ্রীষ্টের অনেকগুলি উপাধির মধ্যে একটি হল “শান্তিরাজ”। মানুষে মানুষে শান্তি ও প্রেম ছিলো তাঁর জীবনের বড় এক লক্ষ্য। প্রেরিত পৌলের এ কথাগুলো আমাদের এ বিষয়ে অনুপ্রাণিত করতে পারে: “শেষে বলি, ভাইয়েরা, যা সত্যি, যা উপযুক্ত, যা সৎ, যা খাঁটি, যা সুন্দর, যা সম্মান পাবার যোগ্য, মোট
কথা যা ভাল এবং প্রশংসার যোগ্য, সেই দিকে তোমরা মন দাও। তোমরা আমার কাছে যা শিখেছ ও ভাল বলে গ্রহণ করেছ এবং আমার মধ্যে যা দেখেছ ও আমার মুখে যা শুনেছ, তা-ই নিয়ে নিজেদের ব্যস্ত রাখ। ভাতে শান্তিদাতা ঈশ্বর তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকবেন।" (ফিলিপীয় ৪:৮-৯)। তাই আমরা খ্রীষ্টের প্রদর্শিত পথে চলে একটা সুন্দর ও শান্তির সমাজ তৈরীর কাজে অবদান রাখবো।
অন্যান্য ধর্মেও এই সহাবস্থানের কথা বারবার বলা হয়েছে। তোমার শিক্ষক এবং বন্ধুদের সাথে কথা বলে তুমি আরও অনেক কিছু জানতে পারবে।
প্রধান প্রধান ধর্মীয় উৎসব
শিক্ষক তোমাকে খ্রীষ্টধর্মের প্রধান উৎসব কী তা জিজ্ঞেস করতে পারেন। আরও জিজ্ঞেস করতে পারেন অন্য ধর্মের প্রধান প্রধান কোনো উৎসবের নাম তুমি জানো কি-না। তুমি যদি কখনও তোমার অন্য ধর্মের বন্ধুদের সাথে তাদের ধর্মীয় উৎসবগুলো পালন করে থাকো তবে তোমার শিক্ষককে জানাতে পারো। তোমার শিক্ষক নিচের তালিকাটি দেখাবেন যেখানে ইসলাম ধর্ম, হিন্দুধর্ম এবং বৌদ্ধধর্মের প্রধান উৎসবগুলো কী কী তা লেখা আছে।
আরও দেখুন...